ময়মনসিংহের ত্রিশালে ট্রাকচাপায় মায়ের মৃত্যুর আগে পেট চিড়ে জন্ম নেয় শিশু।
ময়মনসিংহের ত্রিশালে ট্রাকচাপায় মায়ের মৃত্যুর আগে পেট চিড়ে জন্ম নেয় শিশু। শনিবারের এই ঘটনা গুরুত্ব পায় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম। অনেকে বিষয়টিকে অলৌকিক বলছেন। তবে চিকিৎসকরা বলছেন, প্রচণ্ড চাপে এভাবে শিশু জন্ম নিতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে শিশুমৃত্যুর শঙ্কা থাকে বেশি।
মারা যাওয়া ৩২ বছর বয়সী ওই নারীর নাম রত্না বেগম। তার মরদেহ সুরতহাল করেছেন ত্রিশাল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সেকান্দার।
তিনি বলেন, ‘দ্রুতগতির ট্রাকটি ওই নারীর মাথাসহ বুকের পেটের অংশ দিয়ে উঠে যায়। এতে পেটে প্রচণ্ড চাপ লেগে নাভির পাশের অংশের চামড়া ফেটে কন্যাশিশু বেরিয়ে আসে।’
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ত্রিশাল কোর্ট বিল্ডিং এলাকায় শনিবার ওই দুর্ঘটনা ঘটে। এতে রত্না ছাড়াও প্রাণ হারান তার স্বামী মুস্তাফিজুর রহমান ও তাদের ছয় বছর বয়সী মেয়ে সানজিদা আক্তার। রাতে রায়মনি এলাকায় শ্বশুরবাড়ির পাশে তাদের তিনজনকে দাফন করা হয়।
রত্নার প্রতিবেশী দেবর মো. শরীফ বলেন, ‘মরদেহ দাফনের আগে আমরা দেখেছি পেট ফাটা। স্বাভাবিকভাবে প্রসব হয়নি। সৌভাগ্যক্রমে আমার ভাতিজি বেঁচে আছে।’
পেট ফেটে শিশুর জন্ম নেয়ার প্রসঙ্গে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আফতাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘যদি ওই ট্রাক শুধুমাত্র নারীর মাথা থেঁতলিয়ে চলে যেত, তাহলে শিশুটি অক্সিজেন না পেয়ে গর্ভেই মারা যেত। অথবা জরায়ু মুখ দিয়ে শিশুটি দ্রুত বাইরে বেরিয়ে আসত।
‘পেটের একাংশের ওপর দিয়ে গাড়ি চলে গিয়ে পেটের মাঝখানে চাপ সৃষ্টি হয়। এ সময় পেট ফেটে গর্ভে থাকা শিশুটি শতভাগ মারা যাওয়ার শঙ্কা থাকলেও সৌভাগ্যক্রমে কোনো শিশু বাঁচতেও পারে। ত্রিশালে ঠিক এমন ঘটনা ঘটতে পারে।’
রত্নার প্রসবের সময় দুদিন আগে পার হয়ে যাওয়ার কথা জানান তার শ্বশুর মোস্তাফিজুর রহমান বাবলু। বলেন, ‘সময় পার হয়ে যাওয়ার কারণেই তাকে একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আল্ট্রাসনোগ্রাফি করতে নিয়ে গিয়েছিল আমার ছেলে। ফেরার পথে তাদের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। তবে নবজাতক সম্পূর্ণ সুস্থ আছে।’
দুর্ঘটনার পর ওই শিশুকে নেয়া হয় কমিউনিটি বেজড মেডিক্যাল কলেজ বাংলাদেশ (সিবিএমসিবি) হাসপাতালে। মেডিক্যাল কর্মকর্তা আরিফ আল নূর বলেন, ‘এখানে আনার পর আমরা বাচ্চাটির অবস্থা ভালো পেয়েছি। পরে এক্স-রে করার পর ডান হাতের দুটি অংশ ভাঙা দেখা গেছে। তবে বাচ্চাটি আর কোথাও আঘাত পায়নি।’
শিশুটির চিকিৎসা ও পরবর্তী ভরণপোষণের দায়িত্ব নিয়েছেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. এনামুল হক।
তিনি বলেন, ‘আমি ওই শিশুকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে শিশুটির চিকিৎসা খরচসহ ভবিষ্যতে যেন কোনো সমস্যা না হয় সে জন্য তার নামে একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট করে দেব।’
ময়নমনসিংহ নগরীর চরপাড়া এলাকার লাবিব হাসপাতালে মেয়েশিশুটিকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।