খুলনা মহানগরীর ২২ খাল দখলমুক্ত না করলে জলাবদ্ধতা নিরসন সম্ভব নয় ।

Comments · 33 Views

লাইক কমেন্টস শেয়ার করুন

 
শেখ মাহাবুব আলম খুলনা প্রতিনিধি: খুলনা মহানগরীর পানি প্রবাহের অন্যতম মাধ্যম খাল। এই খালগুলো দখল মুক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। যে কারণে মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে খুলনার ২২টি খাল দখলমুক্ত না করলে জলাবদ্ধতা নিরসন করা সম্ভব নয়।
 দুপুরে খুলনা বিএমএ ভবনের মিলনায়তনে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সুশীলন এবং পরিবর্তন খুলনার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এসব কথা বলেন। খুলনা সিটি কর্পোরেশন এলাকায় প্রান্তিক ও সাধারণ মানুষের পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন, বর্জ্য এবং ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা পরিষেবাসমূহ কার্যকর করার লক্ষে কেসিসি’র গ্রহণ করা পরিবীক্ষণ কাঠামোর ব্যবহার ও কার্যকারিতা বিষয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সুশীলন কনসোটিয়ামের প্রকল্প ফোকাল শাহিনা পারভিন এবং উপস্থিত সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জাবাব দেন সুশীলনের হেব অব রিসার্চ এন্ড এ্যাডভোকেসি মহানামব্রত দাস। স্বাগত বক্তৃতা করেন সুশীলনের পরামর্শক এসকে আমিরুল ইসলাম।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয় সুশীলন কনসোর্টিয়াম খুলনা সিটি কর্পোরেশনে বসবাসরত জনগোষ্ঠীর নাগরিক চাহিদা পূরণে পরিবেশগত সক্ষমতা তৈরি এবং পরিকল্পিত নগর গড়ে তুলতে ২০২১ সালের মে মাসে দুই বছর মেয়াদী একটি প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করছে। প্রকল্পটি খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ৫ ও ৯নং ওয়ার্ডে বাস্তবায়িত হচ্ছে। এ বিষয়ে গবেষণা করা হয়েছে। গবেষণাটি গুণগত ও সংখ্যাগত তথ্য বিশ্লেষণ করে সম্পন্ন করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয় নগরীর ৫ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডে প্রায় ১৬ হাজার পরিবারের বসবাস। এর মধ্যে ৫ শতাংশ পরিবারকে নিয়ে গবেষণা করা হয়। গবেষণার আওতায় ৯নং ওয়ার্ডের ১ হাজার ১৮৬ এবং ৫নং ওয়ার্ডের ৬৬৪টি পরিবার রয়েছে।
গবেষণায় দেখা যায়, খুলনা সিটি কর্পোরেশনের এই দু’টি ওয়ার্ডে নিম্ন আয়ের মানুষ ৮২ শতাংশ নিরাপদ খাওয়ার পানি প্রাপ্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত। ৫৯ শতাংশ পরিবার অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস করে, ৩৮ শতাংশ পরিবারের টয়লেট সরাসরি নর্দমার সাথে সংযুক্ত, ৬০ শতাংশ পরিবার খোলা জায়গায় বর্জ্য অপসারণ করে এবং ৯১ শতাংশ পরিবার বর্জ্য সংগ্রহের সেবা থেকে বঞ্চিত।
এছাড়া কমিউনিটি পর্যায়ে সচেতনতার অভাব, অপর্যাপ্ত ডাস্টবিন ও ভাঙ্গা ডাস্টবিন, সরাসরি নর্দমাতে বর্জ্য ফেলার জন্য রাস্তার পাশের নর্দমা বন্ধ হয়ে যাওয়া, উপযুক্ত নকশাসহ অপর্যাপ্ত ড্রেনেজ ও পানি সরবরাহ, নিম্ন আয়ের এলাকায় অপর্যাপ্ত টয়লেট, অনিয়মিত বাজার পরিস্কারকরণ, নর্দমার সাথে আইন-বহির্ভূত অবকাঠামো ও ভূমির ব্যবহার, অপর্যাপ্ত সরকারি তহবিল, নর্দমার সাথে সরাসরি টয়লেট এবং পানি প্রবাহের সংযোগ, পর্যাপ্ত জনবলের অভাব, অপর্যাপ্ত তদারকি এবং পরিবীক্ষণ, ২৪ ঘন্টার মধ্যে বর্জ্য সংগ্রহের অপারগতা, অগ্রভাগের কর্মীদের চাকুরির অনিশ্চয়তা, পরিবীক্ষণ কাঠামোর অভাব, পরিবীক্ষণ কমিটি, সামাজিক পরিবীক্ষণ এবং স্থায়ী কমিটিগুলো আরও কার্যকরি করা, ইউটিলিটি সেবাসমূহ এবং কমপ্লাইন্স ব্যবস্থাপনায় পরিবীক্ষণের জন্য ডিজিটাল পদ্ধতির ঘাটতি, বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উৎপাদনের জন্য বেসরকারি উদ্যোক্তার অভাব, নিম্ন আয়ের এলাকায় সুপেয় পানি সরবরাহের ঘাটতি, পাইপলাইনের মাধ্যমে পরিবার পর্যায়ে পানির সরবরাহ অনিশ্চয়তা এবং পানি, পয়ঃনিষ্কাশন, নিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি সেবাসমূহ নিশ্চিতকল্পে বিভিন্ন ধরনের সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সমন্বয় এবং সহযোগিতার ঘাটতি রয়েছে।
সংবাদ সম্মলনে বলা হয়, এই পরিবীক্ষণ কাঠামো কেসিসিসহ সকল সরকারি, বেসরকারি বিভাগ ও দপ্তরগুলো তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে জবাবদিহিতা ও সুশাসন নিশ্চিতকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
গবেষণাপত্রে সুপেয় পানি, পয়ঃনিষ্কাশন, নিষ্কাশন এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অবকাঠামো, ঢাকনাযুক্ত ড্রেনের সংখ্যা বাড়ানো, সঠিক জায়গায় বর্জ্য ফেলার ব্যবস্থা করা, পরিবেশ বান্ধব ডাস্টবিনের সংখ্যা বৃদ্ধি, পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেনের সংখ্যা বাড়ানোসহ বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে।
কেসিসি’র ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ আলী জানান, আমার ওয়ার্ডে সকাল থেকে শুরু করে বিভিন্ন এলাকায় আমার তদারকিতে বর্জ্য সংগ্রহের কাজ হয়ে থাকে। এ এলাকার প্রায় ৯০ শতাংশ বর্জ্য সংগ্রহ করা হয়। তবে এলাকার মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব রয়েছে। মানুষ সচেতন হলে কেসিসি’র সেবার মানে পরির্বতন আসবে। একই সাথে খুলনাকে পরিচ্ছন্ন নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে গেলে ২২টি খাল দখলমুক্ত করতে হবে। তাহলে খুলনাকে একটি শান্তির শহর হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব হবে।

খুলনা ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ রেজাউল ইসলাম জানান, ওয়াসা চেষ্টা করছে সকলের দৌড়গোড়ায় সেবা পৌঁছে দিতে। কেসিসি’র ৫ এবং ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের মধ্যে অনেকের জমির মালিকানা সংক্রান্ত কাগজপত্র না থাকায় আমরা পানির সংযোগ দিতে পারিনি।
খুলনা সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী মোঃ আব্দুল আজিজ জানান, শহর থেকে দ্রুত সময়ের মধ্যে বর্জ্য অপসারণের জন্য আমরা দিনে পর্যায়ক্রমে ১৮-২০ ঘন্টা কাজ করছি। কেসিসি নতুন করে বর্জ্য বা ময়লা ডাম্পিং পয়েন্ট করতে জায়গা পাচ্ছে না। ওইসব এলাকায় নতুন করে ডাস্টবিনও স্থাপন করতে পারছে না। ফলে আমাদের কিছু জটিলতা রয়েছে।
Comments
download app
Download

Download App

To Earn Money.