অবশেষে_তুমি #০৫- ইসরাত_জাহান_এশা

Comments · 24 Views

অবশেষে_তুমি #০৫- ইসরাত_জাহান_এশা গল্পটি শেয়ার করুন

 
 
অনেক ভাবনা চিন্তার পরে সন্ধ্যার পর আমি মাকে বল্লাম মা একটু সজীব ভাইয়াকে আসতে বলো আমার কাল পরিক্ষা আছে। দুইটা অংক বুঝি না ভাইয়াকে বলো এসে অংক দুটো করে দিতে।
মা আমার কথা মতো ভাইয়াকে ফোন দিলো। ভাইয়াও আম্মুর ফোন পেয়ে দ্রুত আমাদের বাড়িতে চলে আসে।
--- কি হয়েছে আঁখি কালকে তোমার পরিক্ষা? আমাকে আগে কেনো বলোনি হুট করে এভাবে জরুরি তলব কেউ করে?
---আরে ভাইয়া পরীক্ষা টরিক্ষা কিছু না। জরুরি কথার জন্য ডেকেছি।
--- ওহহ! খারাপ কিছু হয়েছে?
--- ভাইয়া কালকে নজীব ভাইয়া আম্মুকে ফোন দিছিলো ফোন দিয়ে বলছে আপনার সাথে আমার সম্পর্ক আছে। কিন্তু মা বিশ্বাস করেনি ভুলেও নজীব ভাইয়ার সাথে কিছু শেয়ার করবেন না।
সজীব নিজের কপালে হাত রেখে বলে হায় আল্লাহ! কি বলো এসব? আমার ভাইকে তো সব আমি বলে দিয়েছি। এখন কি হবে? আর ভাইয়া নাকি তোমাকে পছন্দ করে আর আমি সত্যিটা বললে সে নাকি সরে যাবে।
---- আল্লাহ ভালো জনেন সামনে কি হতে চলেছে?
সজীবের চোখ লাল হয়ে আসে। সজীব আস্তে করে আঁখির পাশ থেকে উঠে যায় হাঁটতে হাঁটতে চিন্তা করে ভাই হয়ে আমার সাথে এমন কিভাবে করল? ভাইতো জানে আমি আঁখিকে আমার জীবনের থেকেও বেশী ভালোবাসি।
,,,,,,
নজীব সকাল সকাল আঁখির মায়ের সামনে দাড়ায়। আঁখির মা সজীব কে দেখে তুই এখানে? কোন মতলবে এখানে এসেছিস? তোকে বাড়ন করেছি আমার কাছে আসতে। তুই আমার মেয়ের নামে বদনাম তুলতে চাস?
--- নাহ গো চাচী প্রমান নিয়ে এসেছি।
--- মানে?
নজীব আঁখির মায়ের সামনে সজীবের বলা সব কথা রেকর্ড করে আনে। আর সেই রেকর্ড শুনায়।
মা আমার কাছে এসেই কোনো কথা না বলেই চুল গুলো ধরে যা তা গালিগালাজ শুরু করে। শেষে মা সিন্ধান্ত নেয় আমাকে আর পড়াবেন না। ওনার ছেলে ঠিক করা আর তার সাথেই আমার বিয়ে দিবে।
আমার বোনেরা এসব শুনে আবার আসে তারাও অনেক বকাঝকা করে। কোনো উপায় না পেয়ে আমার বড় দুলাভাইয়ের পা ধরে কান্না করে দেই।
---ভাইয়া প্লিজ আমাকে মাফ করে দেন আমি আর কখনো এমন করব না। আমি পড়ালেখা করতে চাই। দয়া করেন আমার উপর আমাকে শুধু পড়ালেখার সুযোগ করে দেন।
কিন্তু মা বোনেরা কেউ আর পড়ালেখার জন্য রাজি না। মা আমাকে প্রচুর মারে এতো মারে যে আমি অজ্ঞান হয়ে যাই।
পরে বড় দুলাভাই আমাকে পুকুর ঘাটে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে গিয়ে অনেক বুঝায়।
--- দেখো আঁখি তুমি আমার ছোটো বোনের মতো। আমরা চাই তুমি বড় হও নিজের ভালো নিজে বুঝতে শিখো। এখন তোমাকে আমি যদি নিয়ে যাই সেখান থেকে তুমি যদি কোনো অঘটন ঘটাও তখন আমার মান ইজ্জত থাকবে?
--- সত্যি দুলাভাই এমন কিছু করব না৷ আপনার পায়ে পরি আমাকে লেখা পড়ার সুযোগ দিন সামনে আমার এক্সাম তারপর টেনে উঠব। প্লিজ এমন কইরেন না দয়া করেন৷ আর আমার বা আমাদের কারোরই প্লান নাই পালিয়ে যাওয়ার।
আমাকে আমার দুলাভাই প্রতিজ্ঞা করায় আমি আর সজীব ভাইয়ার সাথে কথা বলব না। আমিও সেটাই মেনে নেই। দুলাভাই মা কে আর আপুদের বুঝায়৷
বড় আপু আসার সময় আমাকে তাদের বাসায় সাথে করে নিয়ে যায়।
রাস্তা দিয়ে যখন আপুদের বাড়ি যাচ্ছিলাম তখন আমার চোখ দু'টো সজীব ভাইয়াকে খুঁজতে ছিলো। ইশশ! একটাবার যদি দেখতো আমি চলে যাচ্ছি তাহলে ভাইয়া জানতে পারত আমি বড় আপুর সাথে চলে যাচ্ছি।
সজীব আঁখি কে মেসেজ দেয়। কিন্তু অনেক্ষন অপেক্ষা করেও কোনো রিপ্লাই পায়না। রিপ্লাই না পেয়ে সোজা আঁখির বাড়িতে যায়। কিন্তু সজীব খেয়াল করে নজীবও আঁখির বাড়িতেই আছে। সজীব খুব সতর্কতার সাথে ঘরের দিকে লক্ষ রাখে।
একমাস পর আমার নবম শ্রেনীতে পরিক্ষা শুরু হয়৷ এর জন্য আমি বাড়িতে চলে আসি। পরিক্ষা শুরু হবে জেনে সজীব ভাইয়া পুরো পরিক্ষার সময়টা স্কুল গেটের সামনে দাড়িয়ে থাকে। ভাইয়াকে দেখেও আমি না দেখার মতো করে চলে যাই। তখন কলিজা ফেটে কান্না আসার মতো অবস্থা। তাও দাঁতে দাঁত চেপে নিজেকে সামলে বাড়িতে চলে আসি। আমি চাইনা কোনো ঝামেলা হোক। প্রতিটি পরিক্ষায় ভাইয়া স্কুল গেটের সামনে দাড়িয়ে ছিলো।
ভাইয়া পড়ার জন্য ঢাকায় চলে যায়। তিন মাস পরে ভাইয়া মার ফোনে একটা মেসেজ দেয় রাতে সজাগ থেকো আমি আসব তোমার জন্য একটা মোবাইল নিয়ে। এসএমএসটা দেখেই সাথে সাথে ডিলেট করে দেই। আমি আমার বিছানার সাথে থাকা জানালাটা হালকা করে খুলে রাখি।
সজীব চারো দিকে ভালো ভাবে তাকায় সতর্কতার সাথে আঁখির বিছানায় ছুরে দিয়ে দৌড় দেয়। আঁখি মোবাইলটা পেয়ে দ্রুত লুকিয়ে ফেলে।
লুকিয়ে লুকিয়ে সজীব ভাইয়ার সাথে আগের মতো আবারো এসএমএসে কথা হতো। মা জানত যে আমি সব ভুলে গেছি। এর জন্য আর কিছু বলত না৷
সজীব ভাইয়া বাড়িতে আসলে আমার সাথে দেখা করতে চায়। কিভাবে যাবো কিভাবে যাবো কোনো উপায় পাইনা। আমার এক চাচাতো বোনকে বুঝিয়ে বলে পুকুর ঘাটে গিয়ে দাঁড়াই আর সেখানেই ভাইয়ার সাথে পাঁচ মিনিটের মতো কথা হয়।
কিন্তু কিভাবে যেনো নজীব ভাইয়া দেখে ফেলে। সাথে সাথে মায়ের কাছে বিচার দেয়।
মা আমাকে প্রচুর মারধর করে। আর এবার সিন্ধান্ত নিয়ে নেন আমার বিয়ে দিবেন তাও নজীব ভাইয়ার সাথে।
কিন্তু আমি এটা কোনো ভাবেই মেনে নিতে পারব না। তাই আমিও বলি যেহুতু নজীব ভাইয়ার সাথেই বিয়ে দিবে তাহলে সজীব ভাইয়া কি দোষ করেছে? আমরা দুজন দুজনকে ভালোবাসি। নজীব ভাইয়ার থেকে সজীব ভাইয়া লেখাপড়া বুঝ ব্যবস্থা সবার থেকে এগিয়ে।
কিন্তু না আমার মায়ের একটাই কথা ছিলো আমি যা বলব তাই হবে কারো বাপের সাধ্য নাই এ কথা ফেলে দেওয়ার।
নজীব সজীকে গিয়ে তুমুল মারে যাতে ও খুব দ্রুত বাড়ী থেকে চলে যায়। নজীব ভাইয়ের বাবা মাও চায় সজীব ভাইয়া কে সরিয়ে দিতে। তবুও ভাইয়া যায় না।
আপুদের কাছে মায়ের অবৈধ সম্পর্কের কথা বললে আপুরা উল্টে আমাকে মারে। আমি নাকি নিজের দোষ ঢাকতে মায়ের নামে অপবাদ দেই। দুলাভাইরাও এবার আমার উপর ক্ষেপে যায়৷ কেউ আমার একটা কথাও আর শুনেনি।
আমাকে মা একদম ঘর বন্দী করে কারো সাথে কথা বলতে দেয়না এমন কি বাইরের আলো বাতাস যেনো চোখে পড়ে না।
নজীব এটাও জানতে পারে আঁখির কাছে মোবাইল আছে। জানার সাথে সাথে আঁখির মায়ের কাছে বলে দেয়।
মা আমার ঘরে এসে মোবাইল টা খুঁজে বের করে একদম ভেংগে ফেলে। ভাইয়া আমার সাথে কোনো ভাবেই যোগাযোগ করতে না পেরে আমার চাচীর পায়ে ধরে কান্নাকাটি করে। একটাবার আমার সাথে কথা বলার জন্য।
সজীব ভাইয়ার কান্না দেখে চাচীর মন গলে। মা ঘরে আমাকে সহ তালা মেরে চাচীর কাছে চাবি দিয়ে নজীব ভাইয়াদের বাসায় যায়। তখন চাচী তালা খুলে আমাকে পিছনে নিয়ে যায় আর সেখানে সজীব ভাইয়াও থাকে।
সজীব ভাইয়া কাঁদতে কাঁদতে আমার হাতে ধরে বলে।
--- প্লিজ আঁখি তুমি এই বিয়েটা করো না। যেভাবেই হোক এসএসসি পরীক্ষা পর্যন্ত সামলাও। আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। আর যদি মনে হয় সম্ভব না আটকানো তাহলে আমি তোমাকে নিতে আসবো তুমি চলে আসো। আর আঁখি সাবধানে থেকো খাবার গুলো দেখেশুনে খেও তোমার মা আর আমার মা মিলে কালোজাদু করতে গেছে তোমাকে বসে আনার জন্য।
--- আচ্ছা ভাইয়া আমি চেষ্টা করব। আমিও আপনাকে অনেক ভালোবাসি প্লিজ আপনি আমাকে এখান থেকে নিয়ে যান আমি কখনোই নজীব ভাইয়াকে বিয়ে করতে পারব না।
--- আঁখি তোমাকে আরেকটি কথা বলতে চাই। জানিনা তুমি কিভাবে নিবে। তবে এটা জানা তোমার খুব দরকার। এতোদিন সম্পর্ক শেষ হয়ে যাবে এটার ভয়ে তোমাকে কিছু জানায়নি।
--- কি?
--- ভাইয়ার সাথে তোমার মায়ের অবৈধ সম্পর্ক আছে। আমি সেদিন তোমাকে খুঁজতে এসে নিজ চোখে দেখেছি। তারপর থেকে যতদিন বাড়ি থাকতাম প্রায় প্রায় তোমাকে খোঁজার জন্য আসতাম। আর একই কাহিনি আমার চোখে পড়ে।
--- ভাইয়া আপনি এটা জানতেন আগে থেকেই?
--- হুমম। তুমিও জানতে?
---আমি আরো আগেই জানতাম।
--- তাহলে কেনো আমাকে বললে না?
--- বলতাম কিন্তু সম্পর্ক যদি শেষ হয়ে যায় এর জন্যে বলিনি। যদি আপনি খারাপ ভাবে নেন৷ আর যদি কথা না বলেন এর জন্য।
--- কি বলো আঁখি এসব। আমি তোমাকে ভালোবাসি তোমার ভালো খারাপ দুইটাই দেখা আমার দায়িত্ব ।যাই যা হোক আমি তোমাকেই ভালোবাসি আর তোমাকেই চাই। তোমার আপুদের জানাও।
--- জানিয়েছি তারা উল্টো আমাকে মেরেছে। আর বলেছে নিজের দোষ ঢাকতে আমি মা কে বদনাম দিচ্ছি। মাও অনেক মেরেছে আর বলছে বিয়ে করলে নজীব ভাইয়াকেই করতে হবে।
এদিকে চাচী এসে আমাকে আবার ঘরে বন্দি করে দেয়। আর সজীব ভাইয়াকে আশা দেন মাকে বুঝাবেন।
বাড়ির খাওয়া আমি বন্ধ করে দেই। না খেয়ে থাকি বললেই চলে কিন্তু দুই তিনদিন পর আমার কি যেনো হয়ে যাই। পুরো মায়ের বসে চলে আসি। মা যা বলে তাই করছি সজীব ভাইয়ার কথা মনেই পরে না,,,,,,,,,,,
Comments
download app
Download

Download App

To Earn Money.